সোরিয়াসিস  কী? সোরিয়াসিস হল একটি দীর্ঘস্থায়ী, অসংক্রামক, অটোইমিউন রোগ, যা ত্বকের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে হয়।
এই রোগে ত্বক গাঢ়, শুষ্ক, চুলকানি এবং আঁশযুক্ত হয়। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে এই জায়গাগুলো লাল বা বেগুনি রঙের হয়ে যায়। সোরিয়াসিস শরীরের যেকোনও জায়গায় হতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাথার ত্বক, কনুই, হাঁটু, পিঠে দেখা যায়। সোরিয়াসিসের তীব্রতা ছোট, স্থানীয় প্যাচ থেকে সম্পূর্ণ শরীরে হতে পারে। শুকনো ত্বক চুলকে খসে পরার পর সামান্য রক্ত ক্ষরণ হতে পারে। তবে ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্ততে অসংক্রামিত হয় না।



সরিয়াসিস কতটুকু ঝুঁকিপূর্ণ?

১. সরিয়েসিসে আক্রান্ত রোগীদের হার্টের রোগ ও পরিপাক সংক্রান্ত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অধিক। তবে সোরিয়াসিস চিকিৎসা হোমিওপ্যাথিতে নিলে এ ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।

২. সোরিয়াসিসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৩০% রোগীর আর্থ্রাইটিস বা জয়েন্ট প্রদাহ ও অকেজো হতে দেখা যায়। তবে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিলে এ ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।

৩. গবেষণায় দেখা গিয়েছে এ রোগটির সাথে জীনগত (বংশগত) সম্পর্ক রয়েছে এবং আক্রান্তের পরিবারের ২/১ জন সদস্যের মাঝেও এ রোগ বিস্তৃত হতে পারে।

৪. পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৩% মানুষ সরিয়াসিসে আক্রান্ত। দুই বাংলার ব্যাপক সংখ্যক মানুষ সোরিয়াসিস রোগে আক্রান্ত। সুধু অ্যামেরিকাতেই ৬০ লক্ষ মানুষ সরিয়েছিসে আক্রান্ত। বাংলাদেশ ও ভারতের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এ রোগে আক্রান্ত অসহায় রোগীদের সাথে মানুষ তেমন মিশতে চায়না। অনেকের সংসার ভেঙ্গে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে।

৫. বিগত ৩০ বৎসরের পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সোরিয়াসিস চিকিৎসা এর ক্ষেত্রে এই বিষয় গুলো ভালো করে বিবেচনা করা উচিত।

সরিয়াসিসের প্রকারভেদ

১. প্লেক সোরিয়াসিস (plaque psoriasis)

সরিয়াসিসে আক্রান্ত ৮০% রোগী প্লেক সরিয়েসিসের অন্তর্গত। এর বৈশিষ্ট্য হল লালচে প্রদাহিত চর্ম উদ্ভেদের উপরে সিলভার বা সাদা বর্ণের আবরণ, চলটা বা আস উঠে। সাধারণত হাতের কনুই, হাঁটু, মাথা ও পিঠের নিচের দিকে প্লেক সোরিয়াসিস (plaque psoriasis) হতে দেখা যায়।

২. ইনভার্স সোরিয়াসিস (inverse psoriasis)

ইনভার্স সরিয়াসিস সাধারণত বগল, কুঁচকি, স্তন, জনান্দ্রেয় ও নিতম্বের ভাঁজ সহ শরীরের বিভিন্ন ভাঁজে দেখা দেয়।

ইনভার্স সরিয়াসিস দেখতে সাধারণত লালচে হয়, তার চলটা বা আস থাকেনা, অনেকটা মসৃণ ও চকচকে হয়। এটি ঘর্ষণ, চুলকানি ও ঘর্মে জ্বালা যন্ত্রণা করে, অতিমোটা বা চামড়ায় গভীর ভাঁজ যুক্ত ব্যক্তিদের ইনভার্স সোরিয়াসিস (inverse psoriasis) বেশি হয়।

৩. ইরিথ্রোডার্মিক সোরিয়াসিস (erythrodermic psoriasis)

ইরিথ্রোডার্মিক সরিয়াসিসের বিশেষত্ব হল এটি লালচে প্রদাহিত ও শরীরের অনেকটা স্থান জুড়ে হয়। প্লেক সরিয়েসিসের পরবর্তী স্টেজেও এটি হয়। এটা থেকে চলটা বা স্রাব ঝরে এতে প্রচণ্ড চুলকানি ও ব্যথা হতে পারে।

ইরিথ্রোডার্মিক সরিয়াসিস শরীরের রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে শরীরের প্রোটিন ও ফ্লুয়িড ক্ষতিগ্রস্ত করে, তার ধারণ ক্ষমতা বিনষ্ট করে। যার ফলে রোগীর শোথ রোগ, কম্পন বা কাঁপুনি, অনিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রা, নিউমোনিয়া, হার্ট ফেলিওর সহ নানান ধরণের রোগ হতে পারে।

৪. গাউটেড সোরিয়াসিস (guttate psoriasis)

গাউটেড সরিয়েসিস সাধারণত শিশু বা যুবক বয়সে হতে দেখা যায়। এটি লাল ছোট ছোট স্পটের মতো হয়, চামড়া মোটা হয়ে উঠে, প্লাগ সরিয়েসিসের মতো চলটা উঠে।

এর ফলে পরবর্তীতে ঊর্ধ্ব শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা, স্ট্রেপটোকক্কাল প্রদাহ, টনসিল প্রদাহ, ট্রেস বা টেনশন দেখা দিয়ে রোগটি চাপা পড়তে পারে। আবার পর্যায়ক্রমিক ভাবে ফিরে আসতে পারে।

বহুকাল এ রোগটি অনুপস্থিত থেকে পুনরায় ফিরে আসতে পারে ও প্লাগ সরিয়েসিসে রূপান্তরিত হতে পারে।

৫. পাস্টুলার সোরিয়াসিস (pustular psoriasis)

সরিয়েসিসে আক্রান্ত ৫% রোগী পাস্টুলার সরিয়েসিসের অন্তর্গত, এটি শরীরের নির্দিষ্ট স্থানে সাদা পুজবটিকা বা ফোস্কা উৎপন্ন করে তার চারিদিকে লালচে চামড়া থাকে, এটি শরীরের অন্য স্থানে দ্রুত ছড়িয়ে যায়না ও অন্যকে সংক্রমিত করেনা। এটি চক্রাকারে চামড়া লাল হয়ে উঠে, পুজবটি উৎপাদনের স্তর তৈরি করে, পুঁজ নির্গমন ও চলটা উঠতে থাকে।

হোমিওপ্যাথিতে সোরিয়াসিসের চিকিৎসাঃ
সোরিয়াসিস একটি দীর্ঘ মেয়াদি অসুস্থতা। এর থেকে সম্পূর্ণ নিরাময় সময় সাপেক্ষ। হোমিওপ্যাথি একটি ব্যাক্তিভিত্তিক সার্বিক চিকিৎসা পদ্ধতি যা অটোইমিউন রোগে খুব কার্যকরী। এই পরিস্থিতিতে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সোরিয়াসিসের লক্ষণগুলির তীব্রতা কমাতে এবং রোগীকে প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে এক বিশেষ ভূমিকা নিতে পারে।
সমীক্ষায় আরও দেখা গিয়েছে, অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে সঠিক হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করালে সোরিয়াসিসের পুনরায় ফিরে আসাকে প্রতিহত করা যায়। এমনকি, সোরিয়াসিস সম্পূর্ণ নিরাময় করতে সক্ষম। এই রোগের স্থায়ী কোন  চিকিৎসা এলোপ্যথিতে নেই। 

Post a Comment

Previous Post Next Post