আজকে আমরা জানবো ঘুম না হলে আমাদের কি করতে হবে এবং ঘুম আনার উপায় এবং এর জন্য কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি বিশেষ করে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতি এবং কোন পদ্ধতি অবলম্বন করলে আপনি শান্তিতে ঘুমাতে পারবেন এই সকল বিষয়বস্তু আজকের ব্লগে বলা হয়েছে।


সাইকোলজিক্যাল ডিজিস

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাসহ আলোচনা।

সাধারনত যে সাইকোলজিক্যাল ডিজিস গুলো সচরাচর হয় সেগুলো হল।


মানষিক বৈকল্য ও মানষিক রোগ।

  • হিস্টেরিয়া।
  • এ্যালজাইমার্স ডিজিজ।
  • দুশ্চিন্তা।
  • ঘুম না হওয়া।


আজকে আমরা আলোচনা করব শেষ পয়েন্টটি নিয়ে অথাৎ ঘুম না হওয়া।

এক গবেষণায় দেখা গেছে আজকের দিনে বেশিরভাগ মানুষ সাধারণ যেসব সমস্যায় ভোগে তার মধ্যে ঘুমজনিত সমস্যা অন্যতম। পর্যাপ্ত পরিমাণে না ঘুমালে একজন মানুষের শরীরে সবচেয়ে বড় আঘাতটা লাগে মস্তিষ্কে। কেবলমাত্র মস্তিষ্কে ছাড়াও শরীরে আরো অনেক সমস্যার জন্ম দেয় অপর্যাপ্ত ঘুম। আর এসব সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পেতে অনেকে অনেক পথ বেছে নেন। যা কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ হলেও অনেক ক্ষেত্রে তেমন একটা কাজে আসে না।


ঘুম না হওয়ার কারণটা যেভাবে বের করবেন।


প্রথমে নিজেকে প্রশ্ন করুন। কতদিন ধরে আপনার ঘুম নিয়ে সমস্যা চলছে? কবে আপনি শেষবার রাতে শান্তিমতন ঘুমিয়েছেন? এই প্রশ্নগুলোর সাথে সাথে অন্যান্য অনেক প্রশ্নই চলে আসে। আপনি কি কোন বিষয় নিয়ে বেশ চিন্তিত? আপনার ঘরের আশেপাশে শব্দ দূষণ কেমন? কলকারখানার শব্দ, গাড়ির হর্ন, রিকশার বেল, ট্রেনের শব্দ, বিমানের শব্দ? হ্যাঁ, শুনতে হাস্যকর শোনালেও বিমানের শব্দেও অনেকের ঘুম ভেঙ্গে যায়। আচ্ছা, আপনার ঘরে আলোর পরিমাণ কেমন? আপনি ঘুমানো অবস্থায় অন্য কেউ এসে বাতি জ্বালিয়ে কাজ করে? ঘুমাতে গেলেই কি ফেসবুক নোটিফিকেশনের কারণে আপনার ফোন বেজে ওঠে?


এসব হল ঘুম না হওয়ার কারণ। আপনার পরদিন পরীক্ষা, কিংবা কোন পিকনিক বা অনুষ্ঠান আছে বলে বলে ঘুম আসছে না বলে মনে করছেন। কিন্তু এসব আসলে ঘুম না আসার কোনো যৌক্তিক কারণ নয়। মানুষ পরীক্ষা বা পিকনিকের কারণে না ঘুমিয়ে বসে থাকে না। ঘুম আসে না এসব নিয়ে দুশ্চিন্তা বা উত্তেজনার জন্যে।


ঘুমের সমস্যাটা আসলে কতোটা প্রকোপ আকার ধারণ করতে পারে? ধরুন, রাত বারোটায় আপনি ঘুমিয়ে পড়েছেন। অথচ সারা রাত পার হয়ে ফজরের আজান কানে আসলেও আপনার চোখে কোনো ঘুম নেই। প্রতিদিনই এরকমটা হওয়ায় হয়তো নিজেকে প্রফেশনাল মর্নিং হেটার হিসেবেও মনে মনে ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন। ঘুমের জন্যে জন্য বিভিন্ন ঘুমের ঔষধও খাচ্ছেন। প্রথম কয়েকদিন কাজ হলেও কয়েকদিন পর ঘুমের ওষুধও ঠিকঠাক কাজ করা বন্ধ করে দেবে। ঘুমের সমস্যা বেড়ে যাবে আরো।


ঘুমজনিত সমস্যায় প্রথমেই টাবলেট জাতীয় ওষুধের দিকে ঝুঁকে না গিয়ে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিলে সমস্যা থেকে উত্তরন সম্ভব।


হোমিওপ্যথিক ঔষধ।


ঘুম না হওয়ায় সাধারনত যে হোমিওপ্যাথিক ওষধ গুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে সেগুলো হল।


  • Nux vomica
  • Opium
  • Kali phosphoricum
  • Coffea cruda
  • Ambra Grisea
  • Hyoscyamus niger
  • Sulphur
  • Belladonna
  • Chamomilla
  • Arsenic album
  • Gelsemium
  • Ignatia amara
  • Magnesium carbonica
  • Cocculus indicus
  • Cannabis indica
  • Arnica mont
  • Cimicifuga


হোমিওপ্যথিক চিকিৎসাঃ-অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন কয়েকটি হোমিওপ্যাথিক ঔষধের প্রধান প্রধান লক্ষন দেওয়া হল।

Nux vomica : রাতে বিছানায় যাওয়ার পরে সারাদিনের কাজ-কর্মের চিন্তা মাথার ভিতরে কিলবিল করতে থাকে ; ফলে ঘুম আসতে চায় না। বিশেষত যারা বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য সেবন করে, বেশী বেশী চা-কফি পান করেন, যাদের পেটের অসুখ বেশী হয়, নাক্স তাদের অনিদ্রায় ভালো কাজ করে থাকে।

Opium : ঘুমঘুম ভাব কিন্তু ঘুম আসে না। খুবই সেনসিটিভ, ঘড়ির কাটার শব্দ কিংবা দূরের কোন মোরগের ডাকেও তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। দুঃস্বপ্ন দেখে, কুকুর, বিড়াল, প্রেতাত্মা, বোবায়ধরা স্বপ্নে দেখে, ঘুমের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসে ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে অপিয়াম ঔষধটি খেতে হবে।

Kali phosphoricum : ক্যালি ফস অনিদ্রার একটি সেরা ঔষধ। বিভিন্ন কঠিন রোগ ভোগ, অত্যধিক শারীরিক-মানসিক পরিশ্রম, অপুষ্টি, দীর্ঘদিন যাবত স্তন্যদান করা ইত্যাদির মাধ্যমে সৃষ্ট নিদ্রাহীনতায় (বা অন্যকোন রোগে) ক্যালি ফস খেতে হয়। মাঝে মাঝে সপ্তাহ খানেক বিরতি দিয়ে দীর্ঘদিন খান। হৃদপিন্ড, স্নায়ু এবং মস্তিষ্কের উপর ইহার প্রশান্তিকারক ক্রিয়া বিদ্যমান। তাছাড়া যেহেতু এটি একটি ভিটামিন জাতীয় ঔষধ, তাই ইহার কোন ক্ষতিকর সাইড-ইফেক্ট নাই বললেই চলে।

Coffea cruda : মানসিক উত্তেজনা, উৎকন্ঠা, দুঃশ্চিন্তা থেকে অনিদ্রা দেখা দিলে তাতে কফিয়া প্রযোজ্য। সুসংবাদ শুনে, আনন্দের আতিষয্যে, শিশুদের দাঁত ওঠার বয়সে বা রাত জাগার কারণে অনিদ্রা হলে তাতে কফিয়ার কথা ভাবতে হবে। মহিলাদের সন্তান প্রসব পরবতী সময়ের অনিদ্রায় কফিয়া ভালো কাজ করে। খুবই সেনসেটিভ রোগীদের ক্ষেত্রে কফিয়া প্রযোজ্য যারা আওয়াজ সহ্য করতে পারে না, গন্ধ সহ্য করতে পারে না, স্পর্শ সহ্য করতে পারে না ইত্যাদি ইত্যাদি।

Ambra Grisea : সাধারণত চাকুরি বা ব্যবসা সংক্রান্ত দুঃশ্চিন্তার কারণে নিদ্রাহীনতা হলে তাতে এমব্রাগ্রিসিয়া প্রযোজ্য। সারাদিন পরিশ্রম করে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে কিন্তু যখনই বালিশে মাথা রাখে, সাথে সাথেই ঘুম চলে যায়। এই ঔষধের একটি অদ্ভূত লক্ষণ হলো এরা অপরিচিত কেউ সামনে বা আশেপাশে থাকলে, পায়খানা করতে পারে না।

Hyoscyamus niger : মাত্রাতিরিক্ত মাথা খাটুনির কাজ (brainwork) করার কারণে অনিদ্রা দেখা দিলে তাতে হায়োসাইয়েমাস খেয়ে উপকার পাবেন। মাথার মধ্যে জোয়ারের পানির মতো ফালতু চিন্তার স্রোত বইতে থাকে। যদি শিশুরা ঘুমের মধ্যে চীৎকার করে ওঠে, কাঁপতে থাকে ; তবে তাতে হায়োসায়েমাস প্রযোজ্য।

Sulphur : সকাল ১১টার দিকে ভীষণ খিদে পাওয়া, শরীর গরম লাগা, মাথা গরম কিন্তু পা ঠান্ডা, মাথার তালু-পায়ের তালুতে জ্বালাপোড়া ইত্যাদি লক্ষণ পাওয়া গেলে নিদ্রাহীনতা রোগেও সালফার প্রয়োগ করে দারুণ ফল পাবেন।

Belladonna : যদি মুখমন্ডল বা মাথা গরম বা লাল হয়ে থাকে, মাথা ব্যথার থাকে, শরীরে জ্বালা-পোড়াভাব থাকে ইত্যাদি কারণে নিদ্রাহীনতা দেখা দেয়, তবে তাতে বেলেডোনা প্রযোজ্য।

Chamomilla : শরীরের কোথাও মারাত্মক ব্যথার কারণে ঘুমাতে না পারলে, সেক্ষেত্রে ক্যামোমিলা প্রয়োগ করতে হবে। যারা অর্থহীন আজেবাজে স্বপ্নের কারণে শান্তিতে ঘুমাতে পারে না, ঘুমের ভেতরে ছটফট করতে থাকে, দুবর্ল-নার্ভাস মহিলা, শরীর গরম, প্রচুর পিপাসা ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে ক্যামোমিলা উপকার দিবে।

Arsenic album : মাত্রাতিরিক্ত অস্থিরতা, এক মূহূর্তও এক পজিশনে স্থির থাকতে পারে না, লক্ষণ থাকলে তাতে আর্সেনিক খেতে হবে। রাতে একবার ঘুম ভাঙলে আর ঘুম আসে না।

Gelsemium : সাধারণত যারা অতিরিক্ত মানসিক পরিশ্রম করেন অথবা বিষন্নতায় ভোগেন, তাদের অনিদ্রা দূর করতে ব্যবহৃত হয়।

Ignatia amara : সাধারণত শোক-দুঃখ-বিরহ-বিচ্ছেদ ইত্যাদি কারণে ঘুম না আসলে তাতে  ইগ্নেশিয়া প্রযোজ্য। এদের ঘুম এত পাতলা হয় যে, তারা ঘুমের মধ্যে চারপাশের সবকিছুই শুনতে পায়।

Magnesium carbonica : সাধারণত পেটের কোন অস্বস্তি, ভীষণ শীতকাতর-জামাকাপড় খুলতে চান না, পেটে গ্যাসের উৎপাত, আক্কেল দাঁত ওঠা, সারারাত ঘুমিয়েও ফ্রেস লাগে না বরং ঘুম থেকে ওঠার পরে খুবই টায়ার্ড লাগে-মনে হয় সারারাত কুস্তি খেলেছেন, আগুন-ডাকাত-ঝগড়া-মরা মানুষ ইত্যাদি স্বপ্ন দেখে ইত্যাদি লক্ষণে ম্যাগ কার্ব খেতে পারেন।

Cocculus indicus : সাধারণত ভীতু, নার্ভাস, অত্যধিক পড়াশোনা করে এমন লোকদের ক্ষেত্রে কুকুলাস প্রয়োগ করতে হয়। রাত জেগে কাজ করার কারণে যদি অনিদ্রা দেখা দেয়, তবে অবশ্যই ককুলাস খাবেন।

Cannabis indica : ক্যানাবিস ইন্ডিকা সাধারণত দীর্ঘদিনের পুরনো এবং দুরারোগ্য অনিদ্রা রোগে প্রযোজ্য। যাদের একেক দিন একেক টাইমে ঘুম আসে, দিনে ঘুম আসে প্রচুর, রাতের ঘুমে কোন আরাম পাওয়া যায় না, রাতে গরম লাগে যেন কেউ তার গায়ে গরম পানি ঢালতেছে ইত্যাদি লক্ষণে ক্যানাবিস খেতে পারেন। যেহেতু এই ঔষধটি গাঁজা থেকে তৈরী করা হয়, তাই বলা যায় গাঁজার নেশা করার কারণে যদি কারো অনিদ্রা দেখা দেয়, তারা এটি খেয়ে উপকৃত হবেন।

এছাড়াও হোমিওপ্যাথিতে অনিদ্রা বা নিদ্রাহীনতার আরো অনেক ঔষধ আছে যা একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পক্ষে নির্বাচন করা সম্ভব।

নোটঃ-এভাবে বাকি ঔষধগুলো স্ট্যাডি করলে ঘুম না হওয়ার সঠিক হোমিওপ্যাথিকক চিকিৎসা করা যায়।হোমিওপ্যাথিক টিপস এ বাকি ঔষধগুলোর আলাদা আলাদাভাবে বর্ননা দেওয়া আছে। আপনারা স্ট্যাডি করতে থাকেন সবাই ভাল থাকবেন,শুভকামনা সবসময়।


সঠিক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পেতে হলে জানতে হবে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ/নির্দেশনা ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন করা  উচিত নয়।


আপনারা যদি মনে করেন লেখাগুলো আপনার জন্য উপকারি তাহলে আরেক ভাইয়ের জন্যও হয়তো উপকারি হবে , আপনি কষ্ট করে লেখাটি শেয়ার করলে অন্য ভাইও লেখা পড়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারবেন। তাই শেয়ার করুন এবং পেজে লাইক বৃদ্ধিতে সহায়তা করুন। আর এ জন্য ইনভাইট অপসানে গিয়ে বন্ধুদেরকে পেজ লাইকের ইনভাইট পাঠান।

Post a Comment

Previous Post Next Post