রোগ বিবরণঃ হাঁপানী এক প্রকার দুরারোগ্য ব্যাধি। নানা কারনে এই পীড়া হইয়া থাকে। পিতামাতা হইতে অর্থাৎ বংশানুক্রমে অধিকাংশ স্থলে এই পীড়া হয়। ঠান্ডা লাগা অত্যন্ত শারীরিক পরিশ্রম, অধিক ধুমপান ধুলা বালিতে কাজ প্রভৃতি কারনে এই পীড়া হইতে পারে। এই পীড়া সকল বয়সেই হইতে পারে। তবে শিশু ও বৃদ্ধ দিগের ইহা অধিক হইতে দেখা যায়। শ্বাস কষ্ট, বুক সাটিয়া ধরে। শয়ন করিতে পারেনা। বুকের ভিতর সাঁই সাঁই ঘড় ঘড় শব্দ, শ্বাস প্রশ্বাসের কষ্ট। ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায়।
চিকিৎসা
একোনাইট ন্যাপ (Aconite Nap): ভীষণ হাঁপানীর টান। প্রবল শ্বাস কষ্ট। শুইতে বা বসিতে পারে না। অত্যন্ত অস্থিরতা মৃত্যু ভয়, ছটফটানি গলায় সাঁই সাঁই শব্দ। ইত্যাদি লক্ষণে একনাইট অব্যর্থ।
সেবন বিধিঃ শক্তি 1x ৫/৬ ফোঁটা ৪ আউন্স জলের সহিত মিশ্রিত করিয়া এক চামচ মাত্রা অর্ধ বা এক ঘন্টা অন্তর সেবনে খুব শীঘ্র উপকার, হয়। শিশুদের সিকি বা অর্ধ মাত্র।
ক্যানাবিস স্যাটাইবা (Cannabis Satiba): হাঁপানী কাশি, শ্বাস-প্রশ্বাসে অত্যন্ত কষ্ট। বুক চাপিয়া যায়। রোগী হাঁপাইতে থাকে। পাখার বাতাস চায়।
সেবন বধিঃ শক্তি Q ৩/৪ ফোঁটা সামান্য জলসহ দিনে চার বার।
ব্লাটা ওরি (Blatta Ore): হাঁপানী কাঁশির একটি উত্তম ঔষধ। প্রবল হাঁপানীর টানের সময় ইহার Q ৩/৪ ফোঁটা সামান্য জলের সহিত অর্ধ বা এক ঘন্টা অন্তর কয়েক মাত্রা সেবন করিলে, হাঁপানীর টান শ্বাস কষ্টের উপশম হয়। পরে 30 শক্তি প্রত্যহ এক মাত্র। দুই সপ্তাহ পর 200 শক্তি সপ্তাহে এক মাত্রা। এই ভাবে কিছুদিন সেবন করিলে হাঁপানী পুনঃআক্রমনের ভয় থাকে না।
ক্যাসিয়া সোপেরা (Cassia Sophera): সর্ব প্রকার হাঁপানীতে ইহা আমোঘ। অত্যন্ত শ্বাস কষ্ট সেই রূপ কাশিতে কষ্ট। রোগী শুইতে পারে না বসিয়া থাকিতে বাধ্য হয়। কাশিতে ভীষণ কষ্ট ইহার প্রধান পরিচয়।
সেবন বিধিঃ শক্তি Q ৫ ফোঁটা অর্ধ ছটাক জলসহ সকাল ও সন্ধ্যায় দিনে দুই বার ১৫ দিন সেবনে হাঁপানী পীড়া সম্পূর্ণ আরোগ্য হয়।
এরালিয়া (Aralia): গলায় সাঁই সাঁই শব্দ, শুইতে বা হাঁটতে দম বন্ধের ভাব হয়। হাঁটুর উপর ভর দিয়া মাথা হেট করিয়া বসিয়া থাকে। শ্বাস লইতে অত্যন্ত কষ্ট। সহজে নিঃশ্বাস ফেলিতে পারে।
সেবন বিধিঃ শক্তি Q ৩/৪ ফোঁটা অর্ধ ছটাক জলসহ দিনে চার বার।
প্যাসিফ্লোরা (Passiflora) : অত্যন্ত কষ্টদায়ক হাঁপানী, বুক সাঁটিয়া ধরে। গলায় সাঁই সাঁই শব্দ, অত্যন্ত কষ্টকর কাশি শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট ইত্যাদি লক্ষণে ইহা অমোঘ।
সেবনবিধিঃ শক্তি Q ১৫/২০ ফোঁটা এক আউন্স জলে মিশ্রিত করিয়া এক ঘন্টা অন্তর কয়েক মাত্রা সেবনে হাঁপানি টানের উপশম হয়।
জার্বাস্যান্টা (Gerbasanta) : হাঁপানী পীড়ার অন্যতম আশু ফল দায়ক ঔষধ।
সেবনবিধিঃ শক্তি Q, ৪/৫ ফোঁটা সামান্য জলহ দুই ঘন্টা অন্তর কয়েক মাত্র সেবনেই রোগী সুস্থ বোধ করে।
এসপিডোসপার্ম্মা (Aspidosperma): হৃৎপিন্ড সংক্রান্ত হাঁপানী রোগের উৎকৃষ্ট ঔষধ। ইহা ফুসফুসকে বল প্রদান ও রক্তে অক্সিজেন বৃদ্ধি করে। ফলে অতি শীঘ্রই শ্বাস কষ্ট দূর হয়। হাঁপানী রোগে ইহা দ্বারা উপকার হয়। সামান্য পরিশ্রমে শ্বাস কষ্ট হয়। হাঁপা হাঁপি করিতে থাকে।
সেবনবিধিঃ শক্তি Q,৪/৫ ফোঁটা সামান্য জলের সহিত দিনে তিন চার বার।
হিপারসালফ (Heper Sulph): শীত বা গ্রীষ্ম কালে হাঁপানীর টান বাড়ে। বর্ষায় ভাল থাকে। এই লক্ষণে ইহা ব্যবহারে উত্তম ফল পাওয়া যায়।
সেবনবিধিঃ শক্তি 30 বা 200 দিনে দুই মাত্রা।
ক্যালিবাইক্রম (Kali Bichrom): ঠান্ডা লগিলে হাঁপানীর টান বাড়ে। কাশিতে কাশিতে আঠার মত কফ্ উঠে। কফ্ ফেলিতে সুতার মত লম্বা হইয়া পড়ে। রাতে শুইলে শ্বাস কষ্ট বাড়ে। শিশুদের হাঁপানী পীড়ায় এই ঔষধের 6 শক্তি ২/১ ফোঁটা সামান্য জলসহ দিনে দুই তিন বার সেবন করিতে দিয়া বহু রোগী আরোগ্য হইয়াছে। কিছু অধিক দিন ঔষধ ব্যবহার করিত হয়। (অভিজ্ঞতা)
ওসিমামস্যাঙ্কটাম ( Ocimum Sanctum): অত্যন্ত খিটখিটে মেজাজের শিশু অল্পতেই চটিয়া উঠে। সর্দি ঠান্ডা, লাগিলেই হাঁপানীর টান বাড়ে। গলায় সাঁই সাঁই ঘড় ঘড় শব্দ, শ্বাস-প্রশ্বাসের টানে টানে বুকের পাঁজর চাপিয়া যায়। শিশুদের হাঁপানী পীড়ায় এই ঔষধ ব্যবহারে যথেষ্ট উপকার পাইয়াছি।
সেবনবিধিঃ শক্তি 1x, 3x দুই তিন ফোঁটা সামান্য জলের সঙ্গে দিনে চার বার।
আর্সেনিকএলব (Arsenic Alb): যন্ত্রণা দায়ক হাঁপানী, অন্তর্দাহ, ছটফটানি, মৃত্যু ভয়, গলায় সাঁই সাঁই শব্দ, শুইতে অক্ষমতা, মাথা নীচু করিয়া বালিশে ভর দিয়া বসিয়া থাকে। রাত্রে ১২ টা থেকে ২টায় রোগ যন্ত্রণার বৃদ্ধি।
সেবনবিধিঃ শক্তি 30 বা 200 হিপারদিনে দুই মাত্রা।
ইপিকাক (Ipecac): প্রবল হাঁপানীর টান বকে সাঁই সাঁই ঘড় ঘড় শব্দ, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট, শুইলে শ্বাস কষ্ট বাড়ে। কষ্টকর কাশি, গা বমি বমি মাঝে মাঝে ভুক্ত দ্রব্য বমি।
সেবনবিধিঃ শক্তি 3x ৩/৪ ফোঁটা সামান্য জলসহ দুই এক ঘন্টা অন্তর।
এফিড্রিন (Ephidrine): হাঁপানী কাশি ও শ্বাস যন্ত্র সম্বন্ধীয় পীড়ায় ইহা উত্তম ঔষধ হাঁপানী টানের সময়। 1x, 2x, বা 3x বিচুর্ণ ২/১ গ্রেন মাত্রায় এক ঘন্টা অন্তর তিন চার মাত্র সেবনেই উপকার হয়।
লোবেলিয়া ( Lobelia): আক্ষেপিত হাঁপানী কাশি দম বন্ধের মত শ্বাস কষ্ট, বুকে যেন কোন ভারী বস্তু চাপা রহিয়াছে এরূপ অনুভব।
সেবনবিধিঃ শক্তি Q ৩/৪ ফোঁটা সামান্য জলসহ দিনে তিন চার বার।
মডোরিনাম (Medorrhinum) : প্রমেহ পীড়া গ্রস্থ ব্যক্তিদের অথবা তাহাদের ছেলে মেয়েদের হাঁপানী পীড়ায় ইহা অব্যর্থ। শ্বাস ফেলিতে কষ্ট কিন্তু সহজে নিঃশ্বাস লইতে পারে। ঠান্ডা অবহাওয়ায় সুস্থ বোধ করে।
সেবনবিধিঃ শক্তি 200, 1x বা আরো উচ্চ শক্তি দুই মাত্র।
বাইওকেমিক চিকিৎসা
ফেরামফস (Ferrum Phos): শীত কালে ঠান্ডা লাগায়, পাটের বা তুলার ধুনা, ধুলি ইত্যাদি বায়ুনালীতে প্রবেশ করিয়া কষ্টকর হাঁপানীর মত টান হইলে ইহা উৎকৃষ্ট ঔষধ।
সেবনবিধিঃ শক্তি 6x, ২/৪ বড়ি এক মাত্র (বয়স অনুপাতে) তিন ঘন্টা অন্তর।
ক্যালিফস (Kali Phos): শ্বাস-প্রশ্বাসে ভীষণ কষ্ট, কষ্টকর কাশি গলায় ঘড় ঘড়, সাঁই সাঁই শব্দ, অধিক নাড়াচড়া ও আহারের পর হাঁপানীর বৃদ্ধি। রোগী অতিশয় দুর্বল হইয়া পড়ে।
সেবনবিধিঃ শক্তি 6x বা 12x ২/৪ বড়ি এক মাত্রা (বয়স অনুপাতে) তিন ঘন্টা অন্তর।
নেট্রামসালফ (Narrum Sulph): হাঁপানী কাশির সহিত গলায় সাঁই সাঁই, ঘড় ঘড় শব্দ, শুইলে শ্বাস কষ্ট বাড়ে। রোগী বিছানায় বসিয়া থাকে। সর্দি বসিয়া গিয়া হাঁপানী, ভোর রাতে হাঁপানী বৃদ্ধি। গনোরিয়া বিষ দুষ্ট পিতা মাতা বা তার ছেলে মেয়েদের হাঁপানী পীড়ায় ইহা অব্যর্থ।
সেবনবিধিঃ শক্তি 6x বা 12x ১/৪ বড়ি এক মাত্রা (বয়স অনুপাতে) দিনে তিন মাত্রা।
পথ্য ও আনুষাঙ্গিক ব্যবস্থা
হাঁপানী পীড়ায় অতিরিক্ত আহার করা উচিত নয়। বিশেষত রাতে আহার করা নিষিদ্ধ। হাঁপানী রোগী অধিক পরিশ্রম করা নিষেধ। গরম কাপড় দ্বারা বক্ষ আবৃত রাখা ভাল। ঠান্ডা খাদ্য, ঠান্ডা স্থানে বাস করা নিষিদ্ধ। শীতল জলে স্নান করা উপকারী। দুগ্ধ পান, পুষ্টিকর খাদ্য ব্যবস্থেয়। ধুমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
বিঃদ্রঃ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোন ওষুধ গ্রহণ করবেন না
হাঁপানি রোগের হোমিও ঔষধ
Post a Comment