লাইপোমা বা টিউমারের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা।
লাইপোমা ( LIPOMA)
কার্যকরি হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সমূহ:-
লাইপোমা ( LIPOMA) কি ?
লাইপোমা হচ্ছে শান্ত বা নির্দোষ চর্বিযুক্ত টিস্যু দিয়ে তৈরি টিউমার।
চর্বি বা ফ্যাট: মানব দেহে ফ্যাট বা চর্বি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ত্বকের নীচের ফ্যাট বা সাব কিউটেনাস ফ্যাট আমাদের শরীরকে তাপ-শৈত্যের প্রভাব থেকে রক্ষা করে। প্রত্যেকের শরীরে এই চর্বি বা ফ্যাট কম বা বেশি পরিমাণে আছে।
আর ত্বকের নীচের এই ফ্যাট বা চর্বি মাঝে মাঝে শরীরের সাথে প্রতিকূলাচরণ করে। যখন ফ্যাট টিস্যু শরীরের এক যায়গায় অথবা শরীরের বিভিন্ন যায়গায় জমা হয়ে গুটির আকার ধারণ করে এক ধরনের চর্বি জাতীয় টিউমার ( লাইপোমা) তৈরি করে।
ত্বক ও মাংসপেশির মাঝে সৃষ্টি হয় লাইপোমার।
লাইপোমাগুলোতে হাত দিয়ে স্পর্শ করলে নরম অনুভব হয়, আঙুল দিয়ে চাপ দিলে এটি নড়াচড়া করে।
তবে কিছু ক্ষেত্রে লাইপোমাগুলো শক্ত হয়, কিন্তু নড়াচড়া করে।
সাধারণতঃ লাইপোমা ব্যথা হয় না।
কিন্তু লাইপোমাগুলো বড় হলে রক্তনালি( Blood vessels) বা স্নায়ুকোষ ( Nerve cells)'এ চাপ পড়লে ব্যথা হতে পারে।
লাইপোমা সাধারনতঃ এক সেন্টিমিটার ব্যাসেরও কম আঁকড়ে হয়।কিন্তু কোন কোন লাইপোমা ছয় সেন্টিমিটারের চেয়ে বড় আঁকড়ে হয়।
এক বা একাধিক স্থানে লাইপোমা হতে পারে। অনেক সময় দলবদ্ধ ভাবে হয়।
লাইপোমা ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সের মানুষের মধ্যে দেখা যায়।
তবে শিশুদেরও এটা হতে পারে।
পুরুষ বা মহিলা উভয়ের লাইপোমা হতে পারে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে লাইপোমা রোগকে বেশ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করেছে।
যেমন
১).অ্যাঞ্জিওলিপোমা
(ANGOILIPOMA)
এই ধরনের লাইপোমা চর্বি এবং রক্তনালী দ্বারা গঠিত। তারা প্রায়ই বেদনাদায়ক হয়।
২).প্রচলিত: (Conventional)
এই ধরণের লিপোমাতে সাদা চর্বি কোষ থাকে। এই সাদা চর্বি কোষ শক্তি সঞ্চয় করে। এই ধরনের লিপোমা হল সবচেয়ে সাধারণ ধরনের লিপোমা।
৩).ফাইব্রোলিপোমা:
(FIBROLIPOMA)
এই ধরণের লিপোমা ফ্যাট এবং ফাইবারাস টিস্যু দিয়ে গঠিত।
৪).মাইলোলিপোমা:
( MYELOLIPOMA)
এই ধরণের লিপোমা রক্তের কোষ উৎপাদনকারী চর্বি এবং টিস্যু দিয়ে গঠিত।
৫).হাইবারনোমা:
( HIBERNOMA)
এই ধরণের লিপোমা বাদামী চর্বি দিয়ে গঠিত। বাদামী চর্বি কোষ তাপ উৎপন্ন করে এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৬).স্পিন্ডল সেল:
(SPINDLE CELL)
এই ধরনের লাইপোমা চর্বি কোষ দ্বারা গঠিত যা চওড়া থেকে দীর্ঘ।
৭).প্লেঅমরফিক:
( PLEOMORPHIC)
এই ধরণের লিপোমাতে বিভিন্ন আকার এবং আকারের চর্বি কোষ থাকে।
লাইপোমা কেন হয়? ★*
এই নিয়ে সঠিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না।
কেউ কেউ বলেন জীন ঘটিত। অথাৎ পূর্ব পুরুষদের করো যদি এই রোগ থেকে থাকে, তবে উত্তর পুরুষদের হতে পারে।
আবার অনেকে অন্য রকম মত ব্যক্ত করেন।
আমাদের শরীরের যে পরিমাণ স্নেহ পদার্থ ( চর্বি / FAT) প্রয়োজন।
অনেকে তার চেয়ে বেশি স্নেহ জাতীয় খাবার গ্রহণ করে। কিন্তু খরচ করে না।
অথাৎ আমরা সঞ্চয় করি কিন্তু খরচ করি না। তাতে সঞ্চয়ের পরিমাণ বাড়বে।
শরীরের তো বাঙ্কার নেই যেখানে অতিরিক্ত স্নেহ (FAT) জাতীয় পদার্থ জমা করবে!
তাই এই চর্বি রক্তের সামগ্রিক কোলেস্টেরলের মাত্রা ও আমিষের(Protein)এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
ফলে যেটা হয়
হৃদরোগ,রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে যাওয়া( blood sugar level) , মেটাবলিজম ক্রিয়া ঠিকঠাক হয় না, শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ হওয়া, তারমধ্যে লাইপোমা একটি রোগ।
লাইপোমা রোগ হলে যা করনীয়
১). প্রয়োজনের তুলনায় বেশি আহার করা ঠিক না
২).রাতে, খিদে রেখে আহার করা।
৩).বেশি রাতে আহার করবেন না।
৪).খাদ্য তালিকা থেকে প্রানীজ উৎস থেকে পাওয়া খাবার বাদ দিন। ( দুধ সহ মাছ, মাংস ও ডিম) বা পরিমাণে কমিয়ে ফেলুন।
৫).ফাস্টফুড, রিফাইন ফুড ( ময়দা,তেল,ইত্যাদি)
৬). আপনার খাদ্য তালিকায় অবশ্যই যে খাবার গুলো রাখবেন।
ক). এক চামচ তিসি'র বীজ। যেমন খুশি ভাবে খেতে পারেন। জলে ভিজিয়ে বা হাল্কা ভেঁজে খেতে পারেন।
খ). ৫-৬ টি কাজুবাদাম খাবেন।
৭).অবশ্যই কায়িক শ্রম করা উচিত। যাতে শরীরে ঘাম ঝড়ে।
লাইপোমা (LIPOMA)★
রোগ সারাতে কর্যকরি হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সমূহ ★
হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সমন্ধে জানার আগে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সমন্ধে কিছু কথা বলা দরকার।
হোমিওপ্যাথিতে কোন রোগের নাম ধরে চিকিৎসা হয় না।
রোগীর ধাতুগত লক্ষ্মণ, মানসিক লক্ষ্মণ ও রোগ লক্ষ্মণ উপর ভিত্তি করে ঔষধ নির্বাচন করতে হয়।
চেষ্টা করা হলো সাধারন লক্ষ্মণ উপর ভিত্তি করে একটি ঔষধের তালিকা।
১).THUJA OC 1M
এই ঔষধ লাইপোমা রোগের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শুরু আগে পর পর তিন দিন সকালে খালি পেটে খেতে হবে।
তারপর লক্ষ্মণ অনুযায়ী ঔষধ নির্বাচন করে চিকিৎসা করা দরকার।
২). CAL.FOUR 6X
NATRUM SULPH 6X
এই দুটি ঔষধ একসাথে ৬+৬=১২টা বড়ি গরম জলের সাথে দিনে তিন বার খেতে হবে।
শরীরের যে কোন স্থানে, ছোট,বড়,নরম বা শক্ত লাইপোমা রোগে বেশ উপকারী ঔষধ
৩).BARYTA CARB 200
গলা বা ঘাড়ে,কানের পিছনে বা চোয়ালের নিচে থলথলে
লাইপোমা হলে,এই ঔষধ বিশেষ কর্যকরি।
৪).LAPIS ALBUS 30/200
এই ঔষধের বিশেষ লক্ষ্মণ শরীরের যে কোন স্থানে ছোট ছোট গাঁট অথাৎ লাইপোমা হলে বিশেষ উপকারী ঔষধ।
৫).KALI IOD 200
শরীরের যে কোন স্থানে অস্থি-আবরণীর পর্দায় লাইপোমা হলে বিশেষ কর্যকরি ঔষধ।
৬).CALCAREA ARS 200
শরীরে চর্বির জমিয়ে মোটা এবং সাথে লাইপোমা হলে এই ঔষধ বিশেষ কর্যকরি।
৭).PHYTOLOCCA 200/1M
মহিলাদের স্তনের লাইপোমা হলে এই ঔষধ বিশেষ কর্যকরি।
এছাড়াও আরো অনেক হোমিওপ্যাথিক ঔষধ আছে লাইপোমা রোগ সারাতে।
🎍 লাইপোমা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা ★*★*★
১). ★একটি গম আঁকড়ের★ পরিমাণে খাবার চুন সকালে অল্প গরম জলের সাথে পান করলে উপকার পাওয়া যায়।
২) আক্রান্ত স্থানে ঘৃতকুমারীর পাতার জেল (ALOE VERA)
বেশ কিছুক্ষণ হাত দিয়ে ঘষে ঘষে লাগিয়ে রোদে থাকুন।
অথবা
পেট্রোলিয়াম জেলিও একইভাবে ভাবে লাগিয়ে আধঘন্টা রোদে থাকুন
এই কাজটি দিনে দুই বার করুন।
রোদে থাকা সম্ভব না হলে, সুতির কাপড় দিয়ে শুকনো সেঁক দিন।
দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে
লাইপোমা কমে যাবে বা মিলিয়ে যাবে।
৩). ঘৃতকুমারী পাতা'র জেল
(ALOE VERA)
এবং গুড়ো হলুদ সম পরিমাণ মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে ভালো করে লাগিয়ে সুতির কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখুন ৬-৭ ঘন্টা। রাতে শোবার সময় বেঁধে রাখলে ভাল হয়।
লাগাতার ১৫-২০ দিন এই কাজ টি করলে, আপনার লাইপোমা সেরে যাবে।
তবে বলে রাখা ভালো, উপরে দেওয়া আহারের পরামর্শ গ্রহণ করলেই কাজ হবে। এবং ভবিষ্যতেও এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
বিশেষ কথা জেনে রাখা ভালো শরীর কে রোগ মুক্ত করতে প্রতিদিন আহারে ৫০% খাবার ফল এবং স্যালাট খান অথাৎ কাঁচা পাকা ফল কাঁচা সব্জি খান এতে শরীরে পটাসিয়াম ও সোডিয়াম পরিমাণের সমতা বজায় রাখে। পটাসিয়াম ও সোডিয়াম ১ঃ১ থাকলে কোন রোগ আক্রান্তের হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে । হলেও autophagy মাধ্যমে শরীর তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়।
Post a Comment