ঈদ উপলক্ষ্যে খাওয়া বেশি হয়েছে, অ্যাসিডিটির সমস্যা হচ্ছে? তাহলে কি খাওয়া থামিয়ে দিবেন? অবশ্যই না। তবে একটু রাশ টেনে ধরতে হবে, এই আরকি। ভূরিভোজ চলুক, সাথে অ্যাসিডিটিকেও বলুন না!

ভূরিভোজ তারপর অ্যাসিডিটি? 


কোনও কিছু খেলে অ্যাসিডিটি হচ্ছে, না খেলেও টক ঢেকুর আর গলা-বুক জ্বালার সমস্যা বড়ো নাকাল করছে? আপাতভাবে সমস্যাটা তেমন গুরুতর বলে মনে না-ও হতে পারে, কিন্তু যাঁরা ভুক্তভোগী, তাঁরা জানেন অ্যাসিড রিফ্লাক্সের ঝামেলা ঠিক কতটা ভোগাতে পারে। একটু সচেষ্ট হলেই কিন্তু সমস্যাটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। তবে তার জন্য আপনাকে কয়েকটি নিয়ম মেনে চলতেই হবে। তবে তার আগে জেনে নেওয়া দরকার অ্যাসিড রিফ্লাক্স হয় কেন।


আমাদের খাদ্যনালী (ইসোফেগাস) খাবার ও পানীয় বয়ে নিয়ে যায় পাকস্থলীতে (স্টমাক)। এই গতিটা নিম্নমুখি – সাধারণ পরিস্থিতিতে উপরের দিকে অ্যাসিডের উঠে আসার কথা নয়। তা খাবার হজম করার জন্য নিঃসৃত হয় এবং পাকস্থলীর দিকেই যায়। আমরা যখন ঢেকুর তুলি, তখনও ভিতর থেকেই হাওয়া উঠে আসে, তবে তাতে তেমন কোনও সমস্যা নেই। এক-আধবার চোঁয়া ঢেকুরও উঠতে পারে। কিন্তু বার বার আপনার খাদ্যনালীতে অ্যাসিড উঠে এলে সেখানে প্রদাহ তৈরি হবে। ফলে বুক জ্বালা করবে, গলা পর্যন্ত টকভাব টের পাবেন।


যাঁদের অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা আছে, তাঁরা কখনও পেট ভর্তি করে খাবেন না। খাদ্যনালী যেখানে পাকস্থলীতে মেশে, সেখানে একটি রিং গোছের মাসল থাকে, এই মাসলটির নাম ইসোফেগাল স্পিঙ্কটার। এই পেশিটি দুর্বল হয়ে গেলেই রিফ্লাক্স বেশি হয়। তার উপর অতিরিক্ত খাবার খাওয়াটা ঠিক না – তাতে সমস্যা বাড়বে।


সারা দিনে অল্প অল্প করে বার বার খেতে থাকুন, এতে আপনার অ্যাসিডিটিনিয়ন্ত্রণটাও সহজ হবে।


অ্যাসিডিটি দূর করতে কিছুঘরোয়া উপায়:


১) হজম ক্রিয়ার জন্য খুবই ভাল, এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড যা পেটের গ্যাস দূর করে। এক কাপ পানিতে আধা চা চামচ দারুচিনি গুঁড়া দিয়ে ফুটিয়ে নিয়ে দিনে ২/৩ বার এটা খেতে পারেন। এছাড়া চাইলে সুপ/সালাদে দিয়েও খেতে পারেন।


২) পুদিনা পাতার বায়ুনিরোধক ও প্রশান্তিদায়ক গুণ নিমিষেই বুক ও পেট জ্বালাপোড়া করা, পেট ফাঁপা ও বমি ভাব উপশম করে। তাই অ্যাসিডিটির লক্ষণ দেখা দিলেই কয়েকটি পুদিনা পাতা মুখে নিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে হবে বা খেতে পারেন চা বানিয়ে। এক কাপ পানিতে ৪/৫ টি পুদিনা পাতা দিয়ে ফুটিয়ে খেতে পারেন বা চাইলে তাতে একটু মধুও যোগ করতে পারেন।


৩) মাঠাতে থাকা ল্যাক্টিক এসিড পাকস্থলির এসিডকে স্বাভাবিক করে। সারাদিনে কয়েকবার শুধু মাঠা খেলে বা সাথে সামান্য গোলমরিচ গুঁড়া অথবা এক চা চামচ ধনেপাতার রস মিশিয়ে খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায় আবার আধা থেকে এক চা চামচ মেথি সামান্য পানি দিয়ে পেস্ট করে এক গ্লাস মাঠার সাথে মিশিয়ে খেলে অ্যাসিডিটির পেট ব্যথা দূর হয়।


৪) আপেল সাইডার ভিনেগার-এর ক্ষারধর্মী প্রভাব পাকস্থলীর এসিডিটির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। ১-২ চা চামচ অশোধিত ভিনেগার এক কাপ পানিতে মিশিয়ে খাবার আগে বা দিনে এক বা দুইবার খেতে পারেন।


৫) লবঙ্গপাকস্থলীর অ্যাসিডিটি ও গ্যাস দূর করতে পারে এর বায়ু নিরোধক ক্ষমতার জন্য। ২/৩ টি লবঙ্গ মুখে নিয়ে চুষলে বা সমপরিমাণএলাচ ও লবঙ্গ গুঁড়া খেলে অ্যাসিডিটির জ্বালা এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।


৬) পাকস্থলীর এসিডকে নিরপেক্ষ করে পেটের ব্যাথা দূর করতে এবং হজমক্রিয়ায় জিরা চমৎকার কাজ করে। দেড়কাপ পানিতে এক চা চামচ করে জিরা, ধনে ও মৌরী গুঁড়া এবং সামান্য চিনি মিশিয়ে খালি পেটে খেতে পারেন অথবা এক গ্লাস পানিতে সামান্য জিরার গুঁড়া মিশিয়ে বা ফুটিয়ে ছেঁকে নিয়ে প্রতিবেলা খাবার পর খেতে পারেন।


৭) আদার রস পাকস্থলীর এসিডকে প্রশমিত করতে সাহায্য করে। অ্যাসিডিটির সময় এক টুকরো আদা মুখে নিয়ে চুষলে বা এক কাপ পানিতে কয়েক টুকরো আদা দিয়ে কিছুক্ষন ফুটিয়ে রেখে খেতে পারেন কিংবা শুধু এক চা চামচ করে আদার রস দিনে ২/৩ বার খেলে অ্যাসিডিটির থেকে মুক্তি পেটে পারেন।


৮) পুদিনা পাতার মতো মৌরীরও রয়েছে বায়ু নিরোধক ক্ষমতা যার ফলে খাবার হজম করতে এবং পেটের গ্যাস দূর করতে এটা বেশ কার্যকরী। ভারী ও ঝাল খাবারের পর কিছু মৌরী মুখে দিয়ে চুষতে পারেন। আবার এক বা দুই চা চামচ মৌরী এক কাপ গরম পানিতে দিয়ে কিছুক্ষন রেখে ছেঁকে নিয়ে দিনে কয়েকবার খেতে পারেন।


৯) পাকস্থলীর গ্যাস্ট্রিক এসিডকে নিয়ন্ত্রণ করে এসিডিটি থেকে মুক্তি দেয় দুধ। দুধে থাকা ক্যালসিয়াম পাকস্থলীতে এসিড তৈরিতে বাধা দেয়। শুধুমাত্র এক গ্লাস ঠাণ্ডা দুধ পান করেই এসিডিটির সমস্যা প্রতিরোধ বা উপশম করা সম্ভব।


Post a Comment

Previous Post Next Post