মলদ্বারে পাইলস বা হেমোরয়েডজনিত সমস্যার প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে কোনো ধরনের অপারেশন লাগে না; ওষুধের মাধ্যমে সেটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বলা যায়, ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই বিনা অপারেশনে পাইলসের চিকিৎসা সম্ভব। তবে সেটি নির্ভর করে পাইলসের ধরনের ওপর।




ধরণ/উপসর্গ : বিভিন্ন রকমের পাইলস হতে পারে।


কতগুলো মলদ্বারের ভেতর থাকে, যাকে বলে ইন্টারনাল পাইলস বা অভ্যন্তরীণ পাইলস। আবার বাইরেরগুলোকে এক্সটারনাল পাইলস বা এক্সটারনাল হেমোরয়েড বলে।

পাইলসের সাধারণ উপর্সগুলো হলো—মলত্যাগের পর রক্ত যাওয়া, যাতে সাধারণত কোনো ব্যথা থাকে না। প্রথম ধাপে পাইলস হলে সে ক্ষেত্রে মলদ্বারে বাড়তি মাংসের মতো কোনো কিছুই থাকে না। শুধু মলত্যাগের পর তাজা রক্ত যায়। দ্বিতীয় ডিগ্রি হেমোরয়েড হয়ে থাকলে মলত্যাগের পর তাজা রক্ত যায়, তবে সাধারণত ব্যথা হয় না। মলত্যাগের পর মনে হয়, ভেতর থেকে কী যেন বাইরের দিকে বের হয়ে এসেছে। এরপর সেটি এমনিতেই ভেতরে ঢুকে যায়। তৃতীয় ডিগ্রি হেমোরয়েডের ক্ষেত্রে মলত্যাগের পর বাড়তি চাপ দিয়ে মাংসপিণ্ডটি ঢুকিয়ে দিতে হয়। চতুর্থ ডিগ্রি হোমোরয়েডে বাড়তি মাংসটি ভেতরে ঢোকে না এবং বেশ ব্যথা অনুভূত হয়।

চিকিৎসা : পাইলসের চিকিৎসা নির্ভর করে ধরনের ওপর। প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে, তার প্রথম ডিগ্রি হেমোরয়েড হয়ে থাকলে সে ক্ষেত্রে কোনো অপারেশন লাগে না। এ ধরনের রোগীকে ওষুধ দিয়ে পায়খানা স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রচুর পরিমাণে আঁশজাতীয় খাবার, শাক-সবজি, পানি পান করতে বলা হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে মল নরম করার জন্য কিছু ওষুধ দেওয়া হয়। তাতে প্রায় ৯০ শতাংশ রোগী ভালো থাকে। সেকেন্ড ডিগ্রি হোমোরয়েডেও অপারেশন লাগে না। ইনজেকশন বা স্ক্লেরো থেরাপি দেওয়া যায়। কারো ক্ষেত্রে রিং লাইগেশন করতে হয়, যাকে বলে রাবার রিং লাইগেশন। থার্ড ডিগ্রি, ফোর্থ ডিগ্রি হেমোরয়েডের ক্ষেত্রে অপারেশন লাগে।


এখন অবশ্য আধুনিক পদ্ধতিতে লেজারের মাধ্যমে অথবা স্টেপল হেমোরয়েডোপেক্সি নামক এক যন্ত্রের মাধ্যমে অপারেশন করা হয়, যাতে বাইরে কোনো কাটাছেঁড়া লাগে না। মলদ্বারের ভেতর থেকে একটু বাড়তি মাংসের মতো জিনিস কেটে আনা হয়। মলত্যাগের পর তেমন ড্রেসিংয়েরও প্রয়োজন হয় না। রোগীরা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে এবং দুই-তিন দিন পর থেকেই স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরে যেতে পারে। তবে কারো যদি মলদ্বারটি পুরোপুরি বাইরে বের হয়ে আসে, যদি ইনফেকশন হয়—সে ক্ষেত্রে কেটে অপারেশন করতে হয়। একে বলে ওপেন হেমোরয়েডটমি বা ক্লোজ হোমোরয়েডটমি।


তাই মলদ্বারে পাইলসজনিত কোনো সমস্যা হলে অবহেলা না করে শুরুতেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। অপারেশনের ছাড়া ওষুধের মাধ্যমে সেটি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

Post a Comment

Previous Post Next Post